ফেরা

#গল্পঅল্প

ফেরা

আজ অফিস থেকে বের হতে অনেক দেরী হয়ে গেল। এতক্ষণ খেয়াল করে নি, টেবিলের কাগজ গুলো গুছিয়ে রাখার পর ঘড়ির দিকে তাকাল সাত্যকি।ওরে বাবা, ১১ টা বেজে গেছে!অনেক রাত হয়ে গেল। কিছু অবশ্য করার ছিল না। পুরো টেন্ডারটা একবার ঝালিয়ে নেওয়ার ছিল, রেট ঠিক আছে কিনা, ব্যাকআপ গুলো একটু ক্রশ চেক করে নেওয়া। সব অবশ্য করেছে জয়ন্ত। বেশ গুছিয়েই কাজ করেছে। সেও ছিল খানিক আগে অবদি। কিন্তু ওকে যেতে হবে সেই সোনারপুর। তাই সাত্যকি ওকে চলে যেতে বলল। কাল ওকেই আবার তাড়াতাড়ি এসে সব গুছিয়ে নিয়ে, খাম আঁটকে জমা দিতে নিয়ে যেতে হবে। টেন্ডার টা পেয়ে গেলে অনেকদিনের টানা কাজ আসবে, প্রফিট ও ভালো থাকারই কথা। তাই একটু খুঁটিয়েই সব চেক করতে হচ্ছে। কাল ও আসতে পারবে না, সেক্রেটারি মিটিং ডেকেছেন সকালেই। কখন শেষ হবে কে জানে। যদি অনেকক্ষণ ধরে চলে তো তার আগেই জয়ন্ত কে টেন্ডার নিয়ে বেড়িয়ে যেতে হবে। যা দেখার আজই দেখে নিতে হবে। তা মোটামুটি সব প্রায় দেখা হয়ে গেছে।গত কয়েকদিন টানা ট্যুর ছিল, কাল রাতেই ফিরছে। ভালো ঘুম হয় নি। তারপর আজ এতক্ষন কাজ, টায়ার্ড লাগছে। কিছু করারও ছিল না। এখন সব কাজ শেষ। এবার বের হতে পারবে। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে টানা ঘুম দিতে হবে। রেস্ট দরকার। সন্ধ্যে বেলাতেই সীমন্তিনী একবার ফোন করেছিল, তাকেই বলে দিয়েছিল সাত্যকি যে আজ ফিরতে রাত হবে।টেন্ডার ফাইনাল করতে হবে। এসব দেখে দেখে সে অভ্যস্ত, তাই আর ফোন করে নি। আজ সকালে যখন অফিস ঢুকেছিল তখন বৃষ্টি হচ্ছিল, খুব জোরে না, তবে ঝিরি ঝিরি। সারাদিনে যে কয়েকবার কাঁচের জানলা দিয়ে উঁকি দিয়েছে, দেখেছে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। সন্ধ্যের পর অবশ্য আর দেখা হয় নি। টেন্ডার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। জয়ন্ত ছাড়াও প্রথমদিকে কয়েকজন ছিল, তারা নিজেরা নিজেদের কাজটুকু বুঝিয়ে আগেই চলে গেছে। বৃষ্টির জন্যই হবে, সবারই যেন চোখে মুখে একটু তাড়া ছিল। জয়ন্তই শেষ পর্যন্ত অনেকক্ষণ ছিল। তাও সে চলে গেছে একঘন্টার ওপর। শেষ সময়টুকু সাত্যকি একাই ছিল। নিজের কিছু থাম্ব রুল আছে, সেই দিয়ে মিলিয়ে নিচ্ছিল রেট গুলো, না ঠিকই আছে, জয়ন্ত অনেকদিন ধরে ওর সাথে আছে, ভুল কিছু করে নি। সব কাগজ পত্র গুছিয়ে রেখে, ড্রয়ারে চাবি দিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গল সাত্যকি। এই ড্রয়ারের চাবি জয়ন্তর কাছেও আসে, সে সকালে এসে এখান থেকে সব বার করে নিয়ে, খামে পুরে জমা দিতে চলে যাবে, সেই রকমই কথা আছে। চেয়ার থেকে উঠে একটু হাত পা চালিয়ে দেখে। টানা অনেকক্ষণ মাথার কাজ করে ক্লান্তি আরো বেশি লাগছে। ঘরের জানলার কাঁচ দিয়ে এবার বাইরে তাকায় একটু। সেক্টর ফাইভের নিওন আলো গুলো জ্বলছে, আর সেই আলোতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ঝিরঝির করে জলের ধারা।‘সকাল থেকে যে শুরু হয়েছে, এখনও হয়ে চলেছে!’ সাত্যকি মনে মনে বলে।   

পার্কিং লটে আজ কোন গাড়ি নেই। এত রাতে কেই বা থাকবে।অন্যদিন ওর গাড়ির পাশে দুটো কুকুর শুয়ে থাকে। ওর সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে। বিস্কিট থাকলে ওদের প্রায়ই দেয়। কিন্তু ওদের আহ্লাদ বিস্কিটের ওপর নির্ভর করে না। দিলেও নাড়ে না দিলেও সাত্যকিকে দেখে লেজ নাড়বেই। এমনকি গাড়ি নিয়ে বের হলে, ঘেউ ঘেউ করে একটু এগিয়েও দেয়। আজও ব্যাগে একটা বিস্কিটের প্যাকেট রাখা আছে। কিন্তু আজ দুটোর একটাও গাড়ির পাশে নেই। ট্যুরে কদিন বাইরে ছিল বলে কি ওরা সাত্যকিকে ভুলেই গেল!! কিন্তু এরকম তো হওয়ার না, ট্যুরে তো আগেও গেছে।কদিন দিতে পারে নি, তাই আজ বিস্কিটের প্যাকেটও সঙ্গে রেখেছিল। কিন্তু ওরাই তো নেই। একটু অবাক লাগল সাত্যকির। কিন্তু কুকুর নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই। গাড়ির লক খুলে, ল্যাপটপের ব্যাগটা পেছনের সীটে রেখে সাত্যকি গাড়ি স্টার্ট দেয়। কোন রুট নেবে? রাজারহাট দিয়ে চিনার পার্ক নাকি ঘুরে বাইপাশ-উল্টোডাঙ্গা হয়ে। রাজারহাট দিয়ে গেলে এত রাতে ফাঁকা রাস্তায় কতক্ষণ আর লাগবে? খুব বেশি হলে আধঘন্টা, কিন্তু যদি বাইপাস ধরতে হয়, তাহলে অনেক বেশি টাইম লাগবে। এত রাতে শরীর আর দিচ্ছে না। রাজারহাটের দিকটা একটু নির্জন থাকবে, তাতে ওর কি? প্রতিদিন যাচ্ছে, হাতের তালুর মতো পুরো রুট চেনে। যদিও একটু শীত শীত করছিল, তবুও হালকা এসি চালিয়ে কাঁচ তুলে দিল সাত্যকি। গাড়িটা লকও করে দিল। বৃষ্টির দিন, তার ওপর এতো রাত, সিকিউরিটি কে দেখাও গেল না, তা নিয়ে অবশ্য ভাবলও না সাত্যকি। সেক্টর ফাইভ থেকে বেড়িয়ে ডানদিকেই গাড়ি ঘোরাল, নিউটাউনের দিকে।

রাস্তা পুরো ফাঁকা। দু একটা গাড়ি হয়তো আসছে বা যাচ্ছে, কিন্তু সে কিছু না। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, জানলার কাঁচে জলের ধারা, উইন্ড স্ক্রীন টা মাঝে মাঝে ওয়াইপার চালিয়ে মুছে দিচ্ছে, মনে কিরকম একটা রোমান্টিক ভাব চলে আসছে। অনেকদিন গাড়ি চালাচ্ছে সে, নিজের ওপর পুরো কনফিডেন্স আছে। গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমটা কয়েকদিন হল বেগরবাই করছে, নয়তো একটু গান শোনা যেত। কি আর করা, নিজের মনেই দু এক কলি গান ভাঁজতে শুরু করল। মনে অনেক রকম ভাবনা আসছে। টেন্ডার টা যদি লেগে যায়, কম্পিটশনে কারা আসতে পারে, পার্মিশনের জন্য একটা প্রোজেক্ট ঝুলে আছে, কাল সেক্রেটারি কে বলবে কিনা সেই ব্যাপারে, এরকম নানারকম চিন্তা করতে করতে খুব স্মুথ ডিএলেফের কাছে চলে এল সাত্যকি।

এখানে পৌঁছে প্রথমে কিরকম একটা পচা গন্ধ নাকে এল। নাকটা কুঁচকে গেল। গাড়ির ভেতর কিসের গন্ধ? ফ্রেশনার তো ভর্তিই আছে। কিসের গন্ধ যেন, কিসের গন্ধ যেন ভাবতে ভাবতে সারাথির মনে পড়ল কুকুর-বিড়াল অনেকদিন মরে পড়ে থাকলে যেরকম গন্ধ হয়, পচা বোটকা টাইপের, এটা যেন সেরকম গন্ধ। প্রথমে ভেবেছিল, বাইরে কিছু মরে টরে ছিল, তার গন্ধ গাড়িতে এসে ঢুকেছে। কিন্তু গাড়ি তো অনেকটা এগিয়ে এসেছে। পচা মাংসের গন্ধ তো পিছু ছাড়ছে না। ফ্রেশনার বার করে গাড়ি চালাতে চালাতেই গাড়ির মধ্যে একটু স্প্রে করে দিল সাত্যকি। না, কিছু লাভ হল না। পচা মাংসের গন্ধ তো রয়েই গেল! সাত্যকি একটু অবাক হয়, গন্ধ আবার আসছে কোথা থেকে?  

ইতিমধ্যে নারকেল বাগান চলে এসেছে। এবার বা দিকে ঘোরা। হেড লাইটের আলোতে দেখা গেল রাস্তার বাদিকের গাছের পাতাগুলো প্রচন্ড জোরে নড়ছে। ঝড় এলো নাকি? সাত্যকি ভাবে, এখনো মিনিট পনের-কুড়ি লাগবে চিনার পার্ক পৌঁছাতে, ঝড় এলে তো মুশকিল, এদিকে অনেক গাছ পালা। কিন্তু অদ্ভূত কাণ্ড। হেডলাইটের আলোতে সাত্যকি দেখল, রাস্তার ডানদিকের গাছগুলো পুরো স্থির, একটা পাতাও নড়ছে না। কিন্তু বাদিকের গাছগুলোর পাতা এখনো প্রচন্ড জোরে জোরে নড়ছে। কয়েকটা তো এত জোরে নড়ছে যেন মনে হচ্ছে গাছ থেকে ছিঁড়ে মাটিতে পরে যাবে। কি করে এরকম হল? ঝড় উঠলে তো দুদিকের গাছের পাতাই নড়বে? এখানে ত অদ্ভুত ব্যাপার। রাস্তার এক দিকের গাছের পাতা নড়ছে আর অন্যদিকের গাছের পাতা পুরো স্থির। সাত্যকির কপালে অল্প অল্প ঘাম জমতে শুরু করল। গাড়ির এসি আরো একধাপ বাড়িয়ে দিল।আগে তাও দু একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছিল। এখানে এখন কোন গাড়িই নেই আশেপাশে। কি করবে সাত্যকি? গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে বাইপাশ ধরবে? কিন্তু এখান থেকে চিনার পার্ক তো খুব কাছে, যদি ব্যাক করতে হয় ফিরতে কত দেরি হয়ে যাবে! না গাড়ি ঘোরাব না, এগিয়ে যাওয়া যাক, এসবই মনের ভুল, সারাদিন চোখে অনেক স্ট্রেন গেছে, ট্যুরে ভাল ঘুমও হয় নি, রাত হয়েছে, বৃষ্টি পড়ছে, নির্জন রাস্তা, তাই এসব ভয় ঢুকছে মনে। সাত্যকি মনে জোর এনে এক্সিলেটরে চাপ দিল।এই পথটুকু তাড়াতাড়ি পেড়িয়ে যেতে হবে।  

আর একটু এগিয়ে খালের কাছে আসতেই চোখে পড়ল, গাড়ির হেডলাইটের আলোতে, একটা লোক কম্বল মুড়ি দেওয়া, যেন গাড়ির দিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটার হাতে একটা লাঠি, সেই লাঠিতে রাস্তায় ঠকঠক আওয়াজ হচ্ছে। গাড়ির কাঁচ তোলা থাকলেও সেই ঠকঠক আওয়াজ সাত্যকি পরিষ্কার শুনতে পেল। হেডলাইটের আলোতে বাকিটুকু অস্পষ্ট হলেও বোঝা যাচ্ছে খুব শর্ট হাইট, লম্বায় ফুট চারেক হবে। এত বেঁটে মানুষ চট করে নজরে আসে না। লোকটির চোখদুটো অবশ্য পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, গোল বড় বড় দুটো চোখ, একটু গর্ত মতন, চোখের মণির রং সবুজ, অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। সেই সবুজ মণিতে হেড লাইটের আলো ঠিকরে পড়ে সাত্যকির চোখ ধাধিয়ে দিল। প্রাণপণে ব্রেক পা দিয়ে চাপ দেয়। ক্যাঁচ করে আওয়াজ করে গাড়িটা থেমে গেল। কিন্তু কোথায় সেই লোকটা? সামনে ধু ধু পিচের রাস্তা, রোজ যেরকম দেখে, সেই রকমই, শুধু আজ ভিজে আছে, স্ট্রীট লাইটের আলোতে শুধু বৃষ্টির ঝরে যাওয়া দেখা যাচ্ছে। আশে পাশে কোন মানুষ ত দূরের কথা, আর কোন গাড়ির চিহ্ন মাত্র নেই। এটাও ভুল দেখল সাত্যকি? চোখ কচলে আরো দু একবার দেখে, না কিছু নেই, সামনে বা আশে পাশে।একটা ঠান্ডা স্রোত শরীর দিয়ে বয়ে যায়, শরীর টা একটু যেন কেঁপে ওঠে। সাত্যকি আর কোন চিন্তা করে না। গাড়ি স্টার্ট দেয়, এবার আরো বেশি স্পীড, বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় চাকা স্কিড করে যাওয়ার কথা চিন্তা না করেই এক্সিলেটারে পা দেয়, চিনার পার্ক আর কত দূর? দশ মিনিটে পৌঁছানো যাবে না?

এখন সাত্যকি শুধু সামানে তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আশে পাশের দিকে তাকাচ্ছেই না, ঠিক করেই নিয়েছে, যদি দেখে গাড়ির সামনে চাদর মুড়ি দিয়ে ওইরকম কেউ আসছে, গাড়ি থামাবে না, পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। এত রাতে এই বৃষ্টির মধ্যে মাঝ রাস্তায় আসবেই বা কে? সবই মনের ভুল! 

গাড়িটা বেশ খানিকটা গেছে। সাত্যকির চোখে আর কিছু পরে নি। সামনেই আকাঙ্খা মোড়, তারপর চিনার পার্ক তো কাছেই। সাত্যকি একটু রিল্যাক্স বোধ করছে। এমন সময় মনে হল, গাড়ির ভিতর ঠান্ডাটা বেশ খানিকটা বেড়ে গেল, যদিও এসির নবে সাত্যকি আঙ্গুল ছোয়ায় নি। একটু পর সাত্যকি বুঝতে পারল পিঠে কেউ যেন খোঁচা দিল। বন্ধ গাড়িতে কে খোঁচা দেবে? ভাবতে ভাবতেই আবার পিঠে খোঁচা। এবার বেশ জোরে, মনে হয় যেন কেউ লাঠি দিয়ে খোঁচা দিল।অল্প ব্যথাও লাগল। রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে পিছনে তাকিয়ে সাত্যকির গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। পিছনের সীটে বসে আছে, কম্বল মুড়ি দিয়ে একজন লোক।বাইরের স্ট্রীট লাইটের আবছা আলো গাড়ির ভিতর এলেও গাড়ির ভিতরের অন্ধকার পুরো দূর হয় নি। সেই আলো আধারিতে দেখা যাচ্ছে লোকটির কোটরে থাকা সবুজ চোখ জ্বল জ্বল করছে। আর সে তার হাতের লাঠিটা সাত্যকির পিঠের দিকে তাক করে ধরে রেখেছে। 

আ আ আওয়াজ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে সাত্যকির মনে আছে সে প্রাণপণে ব্রেক চেপেছিল, আর স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে রাস্তার ধারে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নিজের ওপর কোন কন্ট্রোল তো ছিল না, একটা গাছে ধাক্কা লেগে গাড়ি থেমে যায়। সাত্যকির আর কিছু মনে নেই।

সাত্যকির জ্ঞান ফেরে সেই লাঠির আওয়াজেই। তবে এবার একটা না, বেশ কয়েকটা। জানলার কাঁচে বেশ কয়েকজন লাঠি মেরে মেরে ওকে কিছু বলছে। সেই আওয়াজে ধীরে ধীরে হুশ ফেরে সাত্যকির। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয় নি, এসিও চলছে। সেটাই বাঁচিয়ে দিয়েছে। নয়তো এতক্ষণে দম বন্ধ হয়ে যেত। বাইরে বেশ কয়েকজন লোক রেন কোট পড়ে দাঁড়িয়ে। সামনেই একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে, লাল-নীল আলো জ্বলছে, বোঝাই যাচ্ছে পুলিশের গাড়ি। সাত্যকি ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে আসে।প্রথমে কোন কথাই প্রায় বলতে পারছিল না। পুলিশরা প্রথমেই ওর মুখের কাছে এসে গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করে, কোন গন্ধ নেই, তবে কি শুকনো নেশা? 

গাড়ি থেকে বের হলেও, সাত্যকির মাথা তখন পুরো ফাঁকা, হাত পা কাঁপছে, কথা আটকে যাচ্ছে। পুলিশরা একটা জলের বোতল দেয়।ঢক ঢক করে খানিকটা জল খেয়ে একটু ধাতস্থ সাত্যকি নাম ঠিকানা ঠিকই বলে, তারপর ধীরে ধীরে যা যা ঘটনা ফেরার সময় ঘটেছিল, সব ঘটনা বলে, একটানা বলতে পারে না, বেশ কয়েকবার থামতে হয়। পুলিশগুলো তো বিশ্বাসই করতে চায় না। বন্ধ গাড়িতে কি করে লোক ঢুকবে? বার বার নেশার কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। ঠিক কথা না বললে থানায় নিয়ে যাবে, এই হুমকিও দেয়। খানিকক্ষণ কথা বলে, এতগুলো মানুষ দেখে সাত্যকি একটু স্থির হয়েছে ততক্ষণে। সাত্যকি নিজের আই কার্ড বার করে দেখায়, প্রায়ই রাইটার্সে মিটিং করতে যেতে হয় বলে, একটা সরকারী গেট পাশ ছিল, সেটাও কাজে দেয়। পুলিশরা ওর কথা বিশ্বাস করল কিনা বোঝা গেল না, তবে নেশা নিয়ে বা এতো রাতে ফেরা নিয়ে কোন অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে না।তবে একবার ভালো করে গাড়ির ভিতরটা আর ডিকি খুলে দেখে নিয়ে ওকে চলে যেতে বলে। গাড়ির খুব একটা ক্ষতি হয় নি, চালিয়ে যাওয়া যাবে। পুলিশদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাত্যকি গাড়ি ঘোরাতে যায়। কিন্তু যতটা ভেবেছিল ততটা ঠিক হয় নি তখনও। হাত পা কাঁপছে, মাথা কাজ করছে না।স্টিয়ারিং ঘোরাবে এমন জোর যেন নেই। সাত্যকির অবস্থা দেখে পুলিশরা কিছু একটা ভাবে। একজন ওকে সড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘আপনি সরুন, আমি গাড়ি চালিয়ে আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসছি, চিনার পার্কের পরে ডাইরেকশন টা ঠিক ঠাক দিতে পারবেন তো?’

এত দিন কত নিন্দে মন্দ শুনেছে, সাত্যকিও হয়তো বলেছে, কিন্তু এই রাতে পুলিশেদের ভূমিকায় সাত্যকি আপ্লুত হয়ে হ্যাঁ বলে কোন রকমে।

সেই রাতে, গভীর রাতে, পুলিশের পাইলট ভ্যান নিয়ে সাত্যকি ভিআইপির মতো বাড়ি ফেরে, যদিও পাইলট ভ্যান আগে না থেকে সাত্যকির পিছন পিছন আসে।

বাড়ী পোঁছে দিয়েও পুলিশরা চলে যায় না। সাত্যকির ওপরে যাওয়া অবদি অপেক্ষা করে। গাড়ি থেকে নেমে সীমন্তিনী কে ফোন ও করে দিয়েছিল। সে ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। সাত্যকি অনেকটাই নিজেকে ফিরে পেয়েছে। গাড়ি ঠিকঠাক গ্যারেজ করে, পুলিশদের আর একদফা ধন্যবাদ জানায়। পুলিশের গাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য স্টার্ট নেয়। সাত্যকি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে একবার সিঁড়ির হাতল ধরে, হাতলটা অবিশ্বাস্য রকমের ঠান্ডা, সেই মুহুর্তে পিঠে হাত যায় সাত্যকির, একটা হালকা অস্বস্তিকর ব্যথা।

সীমন্তিনী ঘরের দরজা খুলে দাঁড়িয়েই ছিল। সাত্যকি খুব দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

শ্রাবণ ঘোষ 
১৬.০৮.’২০

Comments

Science

Popular Posts

ভটচাজ সাহেব

এবার তোরা ত্রিশূল ধর

বাংলার তুল্য শ্রুতিমধুর আর কোন ভাষা!

কেমন আছো আকাশ

।। বৃত্ত টা কিন্তুু ছোটো হয়ে আসছে, আপনি সুরক্ষিত তো? ।।

ধসা বামুন

ছিদ্রান্বেষণ

1.দুইটি পরমাণুর ভর সংখ্যা একই হলেও, নিউট্রন সংখ্যা কম হয় কেন? নিউট্রন কেন আধান নিরপেক্ষ?

অহল্যা

চিঠি