।। বৃত্ত টা কিন্তুু ছোটো হয়ে আসছে, আপনি সুরক্ষিত তো? ।।

।। বৃত্ত টা কিন্তুু ছোটো হয়ে আসছে, আপনি সুরক্ষিত তো? ।।

শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০৬ সালে। তখন পশ্চিমবঙ্গে আসতে শুরু করেছে বড়ো বড়ো বহুজাতিক সংস্থাগুলো,
গমগম করছে সল্টলেক-এর বিভিন্ন সেক্টর, তিলধারণের জায়গা নেই দুপুরের লাঞ্চব্রেকে
সেক্টর৫-এর রাস্তাঘাটে। রাজারহাট আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ পরিকল্পিত শহর। 
ঠিক সেই সময়ে, দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন ফেলল, টাটা মোটরসের 
১ লাখ টাকার গাড়ির খবর। এবং সবাই জানতে পারল, পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে তৈরি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে কমদামি গাড়ি। 
কিন্তুু, স্বপ্ন সত্যি হল না, রাজনৈতিক ফায়দা লোটার লড়াইয়ে স্বপ্ন অস্তমিত হল অচিরেই।
আপনি ভাবলেন, "আমি তো সিঙ্গুরে থাকি না, যাক গে, অত শত ভেবে লাভ নেই, আমার সরকারি চাকরি। কারখানা হল কি না-হল, তাতে কী এসে গেল আর আমার।" 
ক্ষতিটা কি শুধুই সিঙ্গুরের হল? আপনি কিন্তুু তাই মনে করলেন!

২০০৬-এ আপনার ছেলের বয়স ছিল ১৩, এখন সে ২৭। হায়দরাবাদে থাকে ২০১৫ থেকে। আইটি নিয়ে বি.টেক করে চাকরিটা আর কলকাতায় জুটল না, ছেলে প্রবাসী হল। 

২০১৬-য় একদিন সন্ধ্যাবেলা গোটা দেশ উত্তাল হয়ে উঠল। অফিস থেকে ফিরে আপনি দেখলেন, কাল সকাল থেকে আর পুরোনো ৫০০, ১০০০-এর নোট চলবে না, বাতিল। যার যার কাছে যা আছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ব্যাংক থেকে বদলে নিতে হবে। মুচকি হেসে আপনারা কর্তা-গিন্নি বলাবলি করলেন, "যাক গে, আমাদের কী, আমরা তো সরকারি চাকুরে, তবে বেশি করে টাইট হবে এবার কালো টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীগুলো"। 
আপনি শুনলেন, অর্থনীতিবিদরা বলছেন এর জন্যে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হতে পারেন। 
কিন্তুু, আপনার তাতে বিশেষ কর্ণপাত করার প্রয়োজন মনে হল না। কারণ - আপনি তো বৃত্তের বাইরে। 

সত্যিই কি তাই ?

২০১৮-র শেষ দিক, হঠাৎ শুনলেন আপনার পিএসইউ কোম্পানি BSNL-এ নাকি মাইনে বন্ধ হতে পারে। প্রথমটায় আপনি গুজব বলে উড়িয়ে দিলেন। কিছু দিন পর বুঝলেন, খবরটা সত্যি ছিল। দুঃস্বপ্নের মতো দিন কাটতে লাগল। মাসের পর মাস স্যালারি আটকে থাকল। পাড়ার পরিচিত সুচাকুরে আপনি, লোকজন জিজ্ঞেস করতে লাগল "দাদা, কী খবর আপনাদের অফিসের?"
এবার আর আপনি "যাক গে" বলে পাশ কাটাতে পারলেন না। বৃত্তের মধ্যে যে আপনি প্রবেশ করেছেন। 

অনেক ধর্না - লড়াইয়ের পর বেতন পেলেন, তাও পুরো নয়! 
কিন্তুু কোম্পানির কথায় স্বেচ্ছাবসর নিতে হবে। মন্দের ভালো হিসেবে মেনেই নিলেন। 

২০২০-র সেপ্টেম্বর-এর প্রথম সপ্তাহ, আপনার এসবিআই-তে কর্মরতা স্ত্রী খবর পেলেন, শীর্ষকর্তা ও সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী, তাকে কয়েক মাসের মধ্যেই স্বেচ্ছা অবসর নিতে হবে। তার মতো আরও ৩০,০০০ জনকে।
মানে সরকারের ইচ্ছেয় আপনার "স্বেচ্ছা" অবসর আর কি! 

আপনার বৃত্তটা এবার আরও ছোটো হয়ে এল।

ইতিমধ্যেই মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলেও সুপাত্র। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট-এর ইঞ্জিনিয়ার। হঠাৎ, খবর পেলেন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট বেসরকারিকরণ হয়ে যাচ্ছে, অনেকের চাকরি যেতেও পারে। 

এবার আপনি প্রমাদ গুনছেন, বৃত্তটা ছোটো হতে হতে, বড্ড বেশিই ছোটো হয়ে এসেছে। কেমন একটা দমবন্ধ লাগছে। 

এবার একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, আপনি এই বৃত্তে কবে প্রবেশ করেছেন?  
কী ভাবছেন? ২০২০? ২০১৮? ২০১৬? নাকি ২০১৫-য় ছেলে যেদিন কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হল, সেদিন? 

আসলে, না! বৃত্তের মধ্যে আপনি প্রবেশ করতে শুরু করেছেন অনেক আগে। এখন আপনি বৃত্তের একদম মাঝখানে অবস্থান করছেন।

দেখবেন, যেন বৃত্তটা গলার ফাঁস হয়ে না দাঁড়ায়। কেউ খবর রাখবে না! আপনি কিন্তুু, বচ্চন সাহেব নন, যে করোনা হলে গোটা দেশ আপনার জন্যে যাগযজ্ঞ করবে, নিদেনপক্ষে সুশান্ত সিংও নন। 

তাই এই লড়াইটা আপনাকে একাই লড়তে হবে! 

Comments

Science

Popular Posts

ভটচাজ সাহেব

এবার তোরা ত্রিশূল ধর

বাংলার তুল্য শ্রুতিমধুর আর কোন ভাষা!

কেমন আছো আকাশ

ধসা বামুন

ছিদ্রান্বেষণ

1.দুইটি পরমাণুর ভর সংখ্যা একই হলেও, নিউট্রন সংখ্যা কম হয় কেন? নিউট্রন কেন আধান নিরপেক্ষ?

অহল্যা

চিঠি