লকডাউন পরবর্তী ভবিষ্যত
না। সমস্যাটা মোটেও চিন কিম্বা নেপাল নয়। আমাদের 'আগামী'র সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে চলেছে দেশের মধ্যেই।
চিনের নিজের দেশের গোলমাল থেকে নজর ঘোরানোর উদ্দেশ্যেই তাদের লাদাখে ঢুকে এই 'কুমীরডাঙা' খেলা।
ভারত সরকারও তাই চুপটি করে বসে মজা দেখছে। যুদ্ধ-টুদ্ধ শেষমেশ বাধবে না, সকলেই জানে।
বিরোধী থাকাকালীন বর্তমান সরকার পক্ষ যা করেছিল, এখনকার বিরোধী পক্ষও তাই করে চলেছে। টুকটাক উসকে দিচ্ছে। সমস্তই ভোটের রাজনীতি।
আপনি 'টিকটক' আনইন্সটলই করুন, আর 'বয়কট চায়না', ওতে চিনের খুব একটা কিছু এসে যাবে না। কারণ, চিনের টোটাল জিডিপি'র মাত্র ৩% ভারতের বাজারে খাটে। আর ভারতের জিডিপি'র ৬%এর বেশী টাকার জিনিস চিনে রপ্তানি হয়।
'বয়কট' 'বয়কট' খেলাটা দু'তরফেই চললে ক্ষতিটা ভারতেরই বেশী । তাই 'বয়কট চায়না' ভোটের ভাষণেই শোনায় ভালো। সিরিয়াসলি কেউই বলে না।
ওদিকে নেপালের লিপুলেখের গোলমালটাও তেমন ইয়ে নয়। আলোচনায় বসলেই মিটে যেতে পারে। ভারত টালবাহানা করে চলেছে বেশ কিছুদিন ধরেই।
সুগৌলির সন্ধির পর ব্রিটিশরা ইচ্ছে করেই ওই বিতর্কিত অঞ্চলে মহাকালী নদীর শাখানদীটিকে ধরে ভারতের বর্ডার ধরে ম্যাপ তৈরি করেছিল। কারন, ওই অঞ্চলটি ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
নেপাল এতোদিন এই সামান্য ৩০০ কিলোমিটার জমি নিয়ে কোনো আপত্তি তোলে নি, কারণ, ভারতের সঙ্গে তার বহুকাল ধরেই সুসম্পর্ক রয়েছে।
পাসপোর্ট ছাড়াই যাতায়াত, বসবাস এমনকি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেপালের অধিবাসীদের চাকরি করাতেও কোনো অসুবিধে ছিল না এতকাল। ভারত টালবাহানা ছেড়ে আলোচনায় বসলেই এ সমস্যা মিটে যাবে অচিরেই।
আসল সমস্যাটা আমাদের দেশের ভেতরকার, আমাদের আগামীর, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের । লকডাউনের আফটার এফেক্ট হিসেবে যেসব বিষয়গুলো আসতে চলেছে, সেগুলি মারাত্মক।
লকডাউন উঠে গেলেই অর্থনীতি আবার আগের মত হয়ে যাবে, এতটা মসৃণ নয় বিষয়টা।
সরকার এখনও তেমন কোনো স্টিম্যুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করেনি, অতএব, দিন দিন অভাব মারাত্মক আকার ধারণ করবে। কাজ হারবেন কোটি কোটি মানুষ।
অভাব মানুষকে বাধ্য করবে সন্তানকে ব্যবহার করে পেটের জ্বালা মেটাতে।শিশুশ্রম, শিশুপাচার, শিশু শোষণ বাড়তে চলেছে ভয়ঙ্কর হারে। অভাবগ্রস্ত এলাকাগুলিতে শিশু ক্রেতা দালালরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আন্তঃরাজ্য, আন্তরাষ্ট্রীয় হিউম্যান ট্রাফিকিং এজেন্টরা টাকা ঢালতে আরম্ভ করেছে এসব এলাকাগুলিতে।
সঙ্গী হয়েছে শ্রম আইনের পরিবর্তন। মাত্র দশ-বারো হাজার টাকায় বন্ডেড লেবার হিসেবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আট-দশ বছরের ছেলে মেয়েরা।
ILOএর হিসাবে, ভারতের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি শিশুর শ্রম বিক্রি হয় প্রতিদিন। এদের প্রায় ৬০% শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। লকডাউন পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যাটা বহুগুণ বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কৈলাশ সত্যার্থীর সংস্থা 'বচপন বাঁচাও আন্দোলন'-এর মতে, সরকার এবং পুলিশ যদি সক্রিয় না হয়, লকডাউন এবং শ্রমআইন পরিবর্তন শিশুদের জীবনে ভয়ঙ্কর কালো দিন আনতে চলেছে। 'ক্রাই' এর মতে, শিশুশ্রম কমানোর ক্ষেত্রে যেটুকু কাজ হয়েছিল, লকডাউন ও শ্রমআইন পরিবর্তন তাকে পিছিয়ে দিল বহুগুণ।
আমাদের দেশে যাদের বাড়িতে ছোটো শিশুদের বাড়ির কাজে রাখা হয়, তাদের মৌলিক অধিকার (খাদ্য, স্বাস্থ্য আর শিক্ষা, মানুষের মত ব্যবহার টা নাহয় ছেড়েই দিন) যে রক্ষা হয় না, তা বহুকাল থেকে আজও আমাদের অনেকেরই জানা।
শিশুশ্রম ও শিশুপাচার একই মুদ্রার এ পিঠ, ও পিঠ। মনে করা হচ্ছে, শিশুদের দেহব্যবসায় ব্যবহার বাড়বে আশঙ্কাজনক হারে, আগের তুলনায় প্রায় ২০ গুন। চাইল্ড পর্নের চাহিদাও বেড়েছে দ্রুত গতিতে,যার জোগানও আসবে দ্রুত।
অভাবের তাড়নায় কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে(পড়ুন, বিক্রি), দেহব্যবসায় লাগানো বাড়ছে প্রতিদিন।
লকডাউনে দেশের জনগনের সীমাহীন অভাব মেটানোর কোনো চেষ্টা না করা এবং শ্রমিক আইন পরিবর্তন এ দেশের শিশুদের জন্য নরকের দরজা হাট করে খুলে ধরতে চলেছে।
জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেছেন, "শিশুশ্রম দেখা মাত্র পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে। এটা আমাদের সকলের কর্তব্য। চুপ করে বসে থাকলে চলবে না।"
কিন্তু, আমরা তা করব কি? নাকি "আমার সন্তানটি তো দুধে-ভাতে রয়েছে, আমার ওসব ঝঞ্ঝাটে দরকার কি?" ভেবে চুপ করে থাকব? এরাই কিন্তু সংখ্যাগুরু, আমাদের দেশের 'আগামী'।
Collected
Comments
Post a Comment
Thank you, Stay connected & subscribe to this blog...