সেই শেষবার

সেই শেষবার 
# আশীষ কুণ্ডু 
2005  । দুর্গাপুজোয় অন্যান্য বারের মত গেছি পূজোয় খড়গপুরে। সপ্তমীর দিন মা বেরোননি‌।" তোরা ঘুরে আয়, আমার হাঁটু ব্যথা , বাড়ীতে বসে টিভিতে কত ঠাকুর দেখছি, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরতে পারবো না। " বলেই বাবার দিকে ঘুরে বললেন, " সবার তো জামাকাপড় হোলো, বাবুর (আমাকে মা স্নেহে কখনো কখনো বাবু 
বলতেন) হোলো না।  "বাবা একটু হেসে
আমার হাতে কিছু অর্থ দিলেন। বললেন, "যাও তোমার জামা কিনে আনো,নাহলে তোমার মা অশান্তিতে ভুগতে থাকবেন। "
পরের দিন অষ্টমী।সকালে মা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে প্রস্তুত। লালপাড় সাদাশাড়ী, কপালে একটু বড় লাল টিপ। দুই ভুরুর মাঝে একটু ভাঁজ পড়তো। আমার মনে হতো ত্রিনয়ন। মন্ডল থেকে পূজোর মন্ত্রধ্বনি ভেসে
আসছে। ধূপধুনোর গন্ধে আমার মনটা কেমন হয়ে গেলো। বাইরের শিউলিতলা ফুলের চাদরে। বাগানের রক্তজবা সকালের উদিতসূর্যের আলোকে ধরে রেখেছে। 
অন্তরে শুনছি মন্ত্রের গুঞ্জন -ঢেউ উঠছে-
ওঁ সর্বমঙ্গল্যে-মাঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে। 
সেদিন সন্ধ্যাবেলা মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "মা ঠাকুর দেখতে যাবে? "
মা দেখলাম রাজি হয়ে গেলেন। আমি একটু অবাক,আবার খুশিও হলাম।মা আজকাল বেরোতে চান না, হঠাৎ রাজী হয়ে
যাওয়াতে ভাইকে বললাম একটা গাড়ী যোগাড় কর। মা বললেন ," গাড়ী কি হবে? এই তো পাড়ার ঠাকুর দেখে, পাড়া থেকে বেরিয়ে গোলবাজারের ঠাকুর দেখবো, ওখানে রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করে রিক্সায় ফিরবো। " মায়ের উৎসাহ দেখে আমিও আমার বৌ আনন্দিত হলাম । মাঠের কাছে বিকেলের বৃষ্টিতে জলকাদা ছিলো, হাত ধরে মাকে পার করালাম। ঠাকুর দেখা, খাওয়া দাওয়া হোলো। পরেরদিন শিবপুরে শ্বশুরবাড়ি চলে গেলাম।ফিরলাম একাদশীর
সকালে ,মা-বাবাকে বিজয়ার প্রণাম করতে। 
পরেরদিন দুপুরে  বালেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মা ব্যালকনিতে। হাত নাড়ছেন। চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো, বোধহয় জল এসেছিলো। সেই শেষ চাক্ষুষ দেখা। জানুয়ারির সাতাশে রাতে মা হঠাৎ চলে গেলেন। সেদিন সন্ধ্যাবেলা অথচ কথা
বলেছি ফোনে, তবু বুঝিনি। আমার জীবনের মাদুর্গার বিসর্জন হয়ে গেলো।

Comments

Science

Popular Posts

ভটচাজ সাহেব

এবার তোরা ত্রিশূল ধর

বাংলার তুল্য শ্রুতিমধুর আর কোন ভাষা!

কেমন আছো আকাশ

।। বৃত্ত টা কিন্তুু ছোটো হয়ে আসছে, আপনি সুরক্ষিত তো? ।।

ধসা বামুন

ছিদ্রান্বেষণ

1.দুইটি পরমাণুর ভর সংখ্যা একই হলেও, নিউট্রন সংখ্যা কম হয় কেন? নিউট্রন কেন আধান নিরপেক্ষ?

অহল্যা

চিঠি